শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দুইজন অধ্যাপককে জঙ্গি বানিয়ে ছেড়েছে একটি মহল। এমনকি খোদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেবক এবং একজন বিশিস্ট মুক্তিযোদ্ধার পুত্রকেও জঙ্গি বানিয়েছে মহলটি। সেই সাথে জঙ্গিবাদের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আরেক পরিবারের সন্তানের বিরুদ্ধেও। তারা দুইজনই কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যাপক। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-শিবিরের ‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট’ হিসাবে পরিচিত সরকারি কলেজটিতে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী চক্র স্বনামে-বেনামে এরকম মিথ্যা অপপ্রচার থেকে শুরু করে মিথ্যা অভিযোগ করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার সরকারি কলেজের হোষ্টেলটির ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে বিএনসিসি’র কার্যক্রম পরিচালনা সহ কলেজের নানা অনুষ্টানে এই অধ্যাপকদ্বয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছিলেন। এ কারনে ক্ষীপ্ত মহলটি। সরকারি কলেজটির আঙ্গিনা দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-শিবির চক্র জবর দখল করে রেখেছিল। এই কলেজে এ সময়ে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটিও ছিল নিষিদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারিদের কলেজ অঙ্গণে যাতায়াতও ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। পুরো কলেজ আঙ্গিণা ঘিরেই এই চক্র গড়ে তুলেছিল ‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট।’ সেই চক্রটি সময়ের বিবর্তনে এখন চাপের মুখে পড়ে ঘাপটি মেরে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
এসবের কারনে ঘাপটি মেরে থাকা মহলটি কলেজের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চর্চাকারীদেরই আঘাত করতে চায়। অভিযোগ উঠেছে, এরই ধারাবাহিকতায় এই মহল কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মোঃ মুফিদুল আলম এবং ইতিহাসের অধ্যাপক মোহাম্মদুল্লাহকে টার্গেট করে। মহলটি এই দুই স্বনামধন্য পরিবারের সন্তানদ্বয়কে জঙ্গিবাদের হোতা বলে মিথ্যা অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর নিকট দরখাস্ত প্রেরণ করে। অথচ যাদের বিরুদ্ধে এরকম জঙ্গিবাদের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে তারা দুইজনই কক্সবাজারের উখিয়ার বাসিন্দা। তদুপরি তারা দুইজনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারি পরিবারেরই সন্তান।
এমনকি তাদেরই একজন অধ্যাপক মোঃ মুফিদুল আলমের পিতা শতবর্ষী মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সেবক হিসাবে পরিচিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ১৯৫৮ সালের আইউব খানের সামিরক শাষনের সময় কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী চেনছড়ির আদিবাসী পল্লীর দাপুটে চাকমা নেতা ফেলোরাম রোয়াজা চাকমার ঘরে এসেছিলেন। সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে জাতির জনকের সেবক হিসাবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু ভক্তদের মধ্যে ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে এখনো দুইজন লোক বেঁচে রয়েছেন। তাদের একজন হচ্ছেন অধ্যাপক মোঃ মুফিদুল আলমের পিতা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এই দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে প্রেরিত মিথ্যা অভিযোগের সরেজমিন তদন্তে এসে শিক্ষা অধিদফতের দুই কর্মকর্তাও হতবাক হয়ে পড়েন। কেননা যে দুষ্টচক্রটি দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে তারা অভিযোগকারী হিসাবে নাম উল্লেখ করেছে আরেক মুক্তিযোদ্ধা উখিয়ার প্রয়াত শমশের আলম চৌধুরীর কনিষ্ট পুত্র উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট কবি আদিল চৌধুরীর নাম। অথচ সেই আদিল চৌধুরীই কক্সবাজার সরকারি কলেজে আসা তদন্ত কর্মকর্তাদ্বয়ের নিকট লিখিতভাবে জানিয়েছেন-তিনি এধরনের মিথ্যা অভিযোগ প্রেরণ করেননি। আদিল চৌধুরী আরো উল্লেখ করেন যে-অধ্যাপক মুফিদুল আলমের পিতা এবং শতবর্ষী আবদুল খালেক এমনই একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক ব্যক্তি যিনি আজীবনই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন লালন করে চলেছেন। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তাদ্বয় এরকম মিথ্যা অভিযোগ তদন্তে এসে জেনে গেছেন কলেজটি গত আড়াই দশক ধরে জামায়াত-শিবির চক্র অন্ধকারে রেখেছিল।
পাঠকের মতামত